শেখ হাসিনা এবং আওয়ামি লিগ ফের একবার বাংলাদেশে ফিরবে বলে বহু মাস ধরেই দাবি করে আসছে দলটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিশাল চাপে আছে। ইউনুস পদত্যাগের ভাবনাচিন্তাও করছেন। এই আবহে একদা হাসিনা ঘনিষ্ঠ ওবায়দুল কাদের বিবৃতি দিয়ে ইউনুসকে আক্রমণ শানালেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত এক চরিত্র ওবায়দুল কাদের। তিনি আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ছিলেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ত্যাগ করার পর থেকে ওবায়দুর কাদেরেরও আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশি মিডিয়ায় এর আগে দাবি করা হয়েছিল তিনি নাকি কলকাতাতেও আছেন। আবার সম্প্রতি দাবি করা হয়, সিঙ্গাপুরে নাকি তিনি মারা গিয়েছেন। এহেন ওবায়দুল কাদেরের নামে আওয়ামি লিগের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে একটি দীর্ঘ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। (আরও পড়ুন: নিজের সংস্থাকে একের পর এক সুবিধা, নোবেলজয়ী ইউনুস এখন 'ভিলেন' বাংলাদেশে!)
আরও পড়ুন: মাঝ আকাশে নাক ভেঙে যাওয়া ইন্ডিগোর বিমানটির নিরাপদ অবতরণে সাহায্য করেছিল বায়ুসেনা
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য, 'জঙ্গি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা রাজনৈতিক দল আওয়ামি লিগের সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে। এই পদক্ষেপ কেবল অসাংবিধানিক, অবৈধ এবং অন্যায্যই নয়, বরং জনগণের ইচ্ছার স্পষ্ট 'অস্বীকৃতি' - যা জাতিকে হতবাক করে দিয়েছে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিক এই বর্বর কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ, যার নিন্দা করার মতো জোরালো ভাষা নেই। স্বাধীনতা অর্জন থেকে আজ পর্যন্ত, বাংলাদেশের অগ্রগতির সকল গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাস্তবায়িত হয়েছে। স্বাধীনতার পর, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সার্বভৌম জাতির জন্য একটি সময়োপযোগী সংবিধান প্রণয়ন করেন। ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তে লেখা এই সংবিধানের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে একটি প্রকৃত কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। তাঁর নেতৃত্বে, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে, বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশকে একটি টেকসই রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার জন্য, বঙ্গবন্ধুর সরকার ভারতের সাথে ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে, স্বাধীনতার মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয় - যুদ্ধের ইতিহাসে এক অসাধারণ ঘটনা। জাতীয় সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য, তার সরকার ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত চুক্তিও স্বাক্ষর করে। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সহায়তায়, বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে এই স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছিল।' (আরও পড়ুন: শ্রীনগরগামী উড়ানের ২ ইন্ডিগো পাইলটকে গ্রাউন্ড করল DGCA, ওদিকে প্রশংসা মন্ত্রীর)
এরপর ওবায়দুল কাদের লেখেন, '২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চালানো হয়। বিদেশি এজেন্ট ইউনুসকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ উপায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। তারপর থেকে, দেশটিকে ধ্বংস করার জন্য সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ৫ অগস্ট এবং তার পরে সারা দেশে গণহত্যা চালানো হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মী, সমর্থক, স্বাধীনতাপন্থী রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতারা, সেইসাথে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা - বিশেষ করে হিন্দুরা - অবর্ণনীয় নিপীড়ন, নির্যাতন এবং গণহত্যার মুখোমুখি হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী থেকে একজন ভ্রান্ত রাজার মতো, অবৈধ, ফ্যাসিবাদী দখলদার ইউনুস আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে অত্যাচারের শ্বাসরোধে বন্দি করে রেখেছে। সাংবিধানিক সংস্কারের নামে, ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তে লেখা সংবিধান বাতিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কার্যকরভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৭৫-পরবর্তী ষড়যন্ত্রকারীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের কষ্টার্জিত সকল অর্জন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।'
আওয়ামি লিগ নেতা এরপর বলেন, 'তথাকথিত করিডোরের আড়ালে বিস্তৃত ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের ভূখণ্ড বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা অনেক আগেই এই বিদেশি চক্রান্ত সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। ইউনুস, একজন বিদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, ক্রমাগত দেশকে বিক্রি করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যরা এবং অন্যান্যরা ইতিমধ্যেই জনসাধারণকে সতর্ক করেছেন। ইউনুস এবং তার জঙ্গি মিত্ররা চট্টগ্রাম বন্দর এবং বিমান ঘাঁটি সহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্থাপনাগুলি বিদেশি শক্তির কাছে হস্তান্তর করছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর থেকে ইউনুস ধর্মীয় উগ্রপন্থী এবং সন্ত্রাসীদের এমনভাবে আশ্রয় দিয়ে আসছেন যা কেবল বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলে না, বরং আমাদের বন্ধু ভারতের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করে তোলে। আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতকে ক্রমাগত বিরোধিতা করে আসছে ইউনুসের জঙ্গি সরকার মুক্তিযুদ্ধে। একই সাথে পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছে - যে দেশটি ১৯৭১ সালে গণহত্যা চালিয়েছিল। এটি গভীর জাতীয় লজ্জার বিষয়।'
সবশেষে ওয়াবদুল কাদের বলেন, 'এই নয় মাসে, জাতি বুঝতে পেরেছে কারা তাদের প্রকৃত বন্ধু, কারা দেশপ্রেমিক এবং কারা বাইরের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নকারী বিদেশি এজেন্ট। বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা পাখির মতো জনগণ এখন বিধ্বস্ত। আহত এবং রক্তাক্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের জন্য রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। সেই আশাই মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের নেত্রী, জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা, দেশকে রক্ষা করার এবং এর হারানো সম্মান ও মর্যাদা পুনরুদ্ধারের এই বিশাল দায়িত্ব পালন করবেন।'