আজকের ব্যস্ত জীবন, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং স্ট্রেস ঘেরা জীবনযাত্রার কারণে অনেকেই রক্তাল্পতার শিকার হচ্ছেন। সাধারণত মানুষ রক্তাল্পতার সঙ্গে সম্পর্কিত কী কী লক্ষণ রয়েছে, সে সম্পর্কে জানেন না। যদি এই লক্ষণগুলি সময়মতো শনাক্ত করা যায়, তাহলে এগুলো থেকে উদ্ভূত জটিলতা এড়ানো সম্ভব। তাই রক্তাল্পতার এই ৯ গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
১. সব সময় ক্লান্ত বোধ করা
রক্তের অভাবে শরীরের কোষগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। এই কারণে ব্যক্তি সবসময় ক্লান্ত বোধ করে, এমনকি যদি সে কঠোর পরিশ্রম না করে, তাও ক্লান্তি আসে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরও সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় অলস লাগে। উপরে ওঠার সময় শ্বাসকষ্ট এবং সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়াও এটা বোঝাতে পারে যে আপনার শরীরে আয়রন বা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি রয়েছে।
২. মাথা ঘোরা এবং মাথাব্যথা
রক্তের অভাবে যখন পর্যাপ্ত অক্সিজেন মস্তিষ্কে পৌঁছায় না, তখন একজন ব্যক্তির প্রায়শই মাথা ঘোরা শুরু হয়। এর সঙ্গে মাথাব্যথাও লেগেই থাকে। হঠাৎ দাঁড়িয়ে থাকলে মাথা ঘোরে। মাথায় ভারী ভাব। মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়। যদি এই সমস্যাটি অব্যাহত থাকে, তাহলে এটি রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
৩. দ্রুত হৃদস্পন্দন
যখন শরীরে রক্তের অভাব হয়, তখন শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হৃদপিণ্ডকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এর ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে পারে। কোনও কারণ ছাড়াই হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি। হালকা শারীরিক পরিশ্রমের পরেও বুকে টান অনুভব করা। ঘুমের মধ্যেও বুক ধড়ফড় করা। এই লক্ষণগুলি ইঙ্গিত দেয় যে শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকতে পারে।
৪. ফ্যাকাশে বা হলুদাভ ভাব
যদিও ত্বকের হলুদ ভাব রক্তাল্পতার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ, তবুও নখ এবং ঠোঁটের রংও পরিবর্তিত হতে পারে। ঠোঁট নীল বা সাদা হয়ে যায়। নখ সাদা এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। চোখের নিচে কালো দাগ এবং ফ্যাকাশে ভাব। এই লক্ষণগুলি দেখায় যে আপনার শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে না।
৫. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
রক্তের অভাবের কারণে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়, যার কারণে ফুসফুস বেশি কাজ করতে শুরু করে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হালকা হাঁটার পরেও শ্বাসকষ্ট। কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়া। গভীর শ্বাস নিতে অসুবিধা। যদি এই সমস্যা বারবার হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে চেকআপ করানো উচিত।
৬. চোখ দেখে বুঝতে পারবেন
আয়রনের ঘাটতি শরীরে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব চোখে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে আয়রনের ঘাটতি চোখের টিস্যুতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন বহন করতে রক্তকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে, যে কারণে ডাক্তাররা প্রায়শই আয়রনের ঘাটতির লক্ষণগুলি দেখার জন্য রোগীদের চোখ পরীক্ষা করেন।
৭. চুল পড়া
হিমোগ্লোবিনের অভাব চুলের গোড়াও দুর্বল করে দেয়, যার ফলে চুল পড়ে যায় বা পাতলা হয়ে যায়। এটি একটি কম লক্ষণীয় কিন্তু গুরুতর লক্ষণ।
৮. বিরক্তিভাব হতে পারে
অক্সিজেনের অভাব মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং এই সমস্যায় ভুগতে থাকা ব্যক্তির খিটখিটে অনুভূতি হয়।
৯. মুখ বা জিহ্বায় ফোলাভাব
রক্তের অভাবে জিহ্বা ফুলে যেতে পারে, জ্বালা অনুভব করতে পারে অথবা মুখে ঘন ঘন ফোসকাও পড়তে পারে। এটি শরীরে ভিটামিন বি ১২ এবং আয়রনের ঘাটতি নির্দেশ করে।
কীভাবে রেহাই পাবেন রক্তাল্পতার হাত থেকে
উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলি যদি আপনার চোখে পড়ে, তাহলে আতঙ্কিত হবেন না। সময়মতো চিকিৎসা এবং সংশোধনের মাধ্যমে রক্তাল্পতা নিরাময় করা সম্ভব।
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান যেমন পালং শাক, বিট, ডালিম, আপেল, ডাল।
- ভিটামিন সি গ্রহণ করুন। এটি আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
- আপনার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরীক্ষা করে চলুন, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট বা সিরাপ খান।
- বেশি করে জল পান করুন এবং মানসিক চাপ কমান।
মনে রাখবেন, রক্তাল্পতা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা যা সময়মতো শনাক্ত করা গেলে এবং সংশোধন করা গেলে সহজেই নিরাময় করা সম্ভব। শুধু মুখের রং দেখে অনুমান করা যথেষ্ট নয়। উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলি উপেক্ষা করবেন না, এবং প্রয়োজনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ সুস্থ শরীর এবং তীক্ষ্ণ মনের জন্য, শরীরে সঠিক পরিমাণে রক্ত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।