জ্যৈষ্ঠ মাসে তাপমাত্রা যখন চরমে থাকে, তখন একটি বিশেষ সময় আসে। তাকে বলা হয় নৌতাপ। টানা ৯ দিন ধরে চলে নৌতাপ। এই সময় সূর্যের তাপ সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়। এমনকি এই সময় তাপমাত্রা অনেক জায়গায় রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, এই বছর নৌতাপ ২৫ মে থেকে শুরু হবে, ৮ জুন পর্যন্ত চলবে। যদিও পুরো ১৫ দিন ধরে তাপমাত্রা তীব্র থাকে, প্রথম ৯ দিন বিশেষ করে সচেতন থাকা জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে, আসুন জেনে নিই নৌতপা সম্পর্কিত কিছু বিষয় এবং সূর্যের তাপ এড়াতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
নৌতাপ কী
নৌতাপ মানে নয় দিনের তাপ। সূর্যদেব যখন রোহিণী নক্ষত্রে প্রবেশ করেন, এই নৌতাপ শুরু হয়। এই সময় রোহিণী নক্ষত্রমণ্ডলে, সূর্যের রশ্মি সরাসরি এবং প্রবলভাবে পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে। এই কারণেই আজকাল গরম তীব্র হচ্ছে। এই বছর, সূর্য ২৫শে মে ভোর ৩:২৭ মিনিটে রোহিণী নক্ষত্রে প্রবেশ করবে এবং ১৫ দিন সেখানে অবস্থান করবে বলে জানা গিয়েছে। এরপর, ৮ জুন, সূর্য মৃগশিরা নক্ষত্রে প্রবেশ করবে, যার ফলে নৌতাপয় ইতি আসবে।
নৌতাপ এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের মধ্যে অটুট সম্পর্ক
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, সূর্য যখন রোহিণী নক্ষত্রে থাকে, তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হল, রোহিণী নক্ষত্রের অধিপতি শুক্রকে সূর্যের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এইসময় সূর্যের শক্তি আরও কার্যকর হয়ে ওঠে। এটাও বিশ্বাস করা হয় যে এই সময়কালে সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে, যার কারণে তাপ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
শাস্ত্র অনুসারে, জ্যৈষ্ঠ মাসে করা দানকে মহাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নৌতাপার সময় আপনি এই জিনিসগুলি দান করতে পারেন। তরমুজ, শসা, আম, ছাতা, মাটির পাত্র, সুতির কাপড় বা হাত পাখার মতো জিনিস দান করা শুভ ফল এনে দিতে পারে। বিশ্বাস করা হয় যে এই মহাদান কেবল অভাবীদের সাহায্য করে না বরং আপনার রাশিফলে সূর্যের অবস্থানকেও শক্তিশালী করে।
নৌতপায় কী করবেন, কী করবেন না
- সকালে স্থানের পর, তামার পাত্র থেকে সূর্যকে জল অর্পণ করুন এবং 'ওঁ সূর্যায় নমঃ' মন্ত্র জপ করুন। এটি শরীরে শক্তি বজায় রাখবে এবং মানসিক শান্তি প্রদান করবে।
- এই সময়ে নিয়মিত আদিত্য হৃদ্য স্তোত্র পাঠ করুন। এতে মন শান্ত থাকবে এবং জীবনে ইতিবাচক শক্তি প্রবাহিত হবে।
- যদি কোনও অভাবী ব্যক্তি আপনার দরজায় কিছু চাইতে আসেন, তাঁকে খালি হাতে যেতে দেবেন না। সামর্থ্য অনুযায়ী জল, ফল বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দান করুন।
- নৌতপের সময়, পথচারীদের জল খাওয়ান বা পানীয় জলের স্টলের ব্যবস্থা করুন। এটি অত্যন্ত পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়। এটা শুধু ধর্ম নয়, মানবতারও পরিচয়।
- এই সময় রসুন, বেগুন, আমিষ খাবারের মতো গরম জিনিস এড়িয়ে চলুন। যতটা সম্ভব জল, ফল এবং ঠান্ডা পানীয় খেতে হবে।