প্রায় ২৮ বছর আগে কলকাতায় জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছিল। সেই অপরাধে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল আদালত। তাঁর সাজা কমিয়ে ২১ বছর করা হয়। কলকাতা হাইকোর্ট ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই আসামিকে জেল থেকে মুক্তির নির্দেশ দিল। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ ওই আসামিকে মুক্তির নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: বর্ধমানে দলের কর্মীকে খুনের চেষ্টা, সাজাপ্রাপ্ত ১২ TMC নেতাকে জামিন দিল হাইকোর্ট
জানা গিয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামির নাম শংকর সুন্দর দত্ত ওরফে টুটি। বর্তমানে তাঁর বাড়িতে রয়েছে ৭৪ বছর বয়সি মা এবং ৮৪ বছর বয়সি বাবা। দুজনেই অসুস্থ। তিনিই হলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। মামলার বয়ান অনুযায়ী, খুনের ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর। ওয়াটগঞ্জ থানার অন্তর্গত রামকমল স্ট্রিটে দুজনকে খুন করা হয়। এছাড়াও, একজন আহত হন। মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ ওঠে। তার একজন ছিলেন শংকর। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগের পাশাপাশি বিস্ফোরক আইনের ৩ ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল। মামলা গড়ায় আদালতে।
২০০১ সালে নিম্ন আদালত সকল অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে। পরে ২০০২ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। ২০০৬ সালে হাইকোর্ট শংকর-সহ সকল অভিযুক্তকে হত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫,০০০ টাকা জরিমানা করে। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শংকর-সহ তিনজন ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
তবে সুপ্রিম কোর্ট ২০০৮ সালে আপিল এবং পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয়। ফলে যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকে আসামিদের। এরপর সাজা কমানোর আবেদন জানিয়ে বারবার রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করতে থাকেন শংকর। সেন্টেন্স রিভিউ বোর্ডের কাছেও আবেদন করেন। তবে ২০২১ সালে সেন্টেন্স রিভিউ বোর্ড তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
পরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শংকর। মামলার আবেদনে বলা হয় তিনি ২০০৬ সাল থেকে জেলবন্দী রয়েছেন। তিনি আরও দাবি করেন, জেলে তাঁর আচরণ সন্তোষজনক ছিল এবং এ পর্যন্ত তাঁকে ১২ বার প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। শংকর জানান, প্রথমবার ২০২০ সালে রিভিউ বোর্ডের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু, তাঁর আবেদন খারিজ করা হয়। অবশেষে বোর্ড তাঁর আবেদন গ্রহণ করেছে। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষকে এই বিষয়টি জানানো হয়।
আবেদনের ভিত্তিতে আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কমিয়ে ২১ বছর করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট আসামিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্য সাজা পর্যালোচনা বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারী আলিপুর আদালতের বিচারকের কাছে মুক্তির জন্য আবেদন করবেন। এরপর নিম্ন আদালত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবেদনকারীকে মুক্তির নির্দেশ দেবে।