মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতার নামে সাম্প্রদায়িক হিংসার তদন্তে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট দিল কলকাতা হাইকোর্ট গঠিত ৩ সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। রিপোর্টে হিংসার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে একাধিক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এমনকী হিংসা হচ্ছে দেখেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলে জানানো হয়েছে ওই রিপোর্টে। গুজরাত দাঙ্গার সময় ঠিক যে অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পুলিশের বিরুদ্ধে।
মুর্শিদাবাদ হিংসার তদন্তে ৩ সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল গঠন করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কমিটিতে রয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রেজিস্ট্রার যোগিন্দর সিং। রাজ্য জুডিশিয়ার সার্ভিসেসের সচিব অর্ণব ঘোষাল ও রাজ্য জুডিশিয়াল সার্ভিসেসের রেজিস্ট্রার সৌগত চক্রবর্তী। এই রিপোর্টেও মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক হিংসাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে ধুলিয়ান পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মেহেবুব আলম গত ১১ এপ্রিল হিংসা ছড়ান। এই মেহেবুব আলমকে ধুলিয়ান পুরসভার প্রশাসক হিসাবেও নিযুক্ত করা হয়েছিল। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এলাকার শাসকদলের নেতারা বা পুলিশ হিংসা বন্ধ করতে কোনও উদ্যোগ নেননি। মেহেবুব আলম নিজে দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে যোগদান করে হিংসা ছড়ান বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, ১১ এপ্রিল দুপুরের পর আক্রমণ আরও তীব্র হয়। ১১ এপ্রিল তৃণমূলের এক বিধায়ক হিংসাকবলিত এলাকা দেখে ফেরত চলে যান। তিনিও হিংসা বন্ধ করতে পদক্ষেপ করেননি। যার ফলে পরদিনও হিংসা জারি ছিল।
কমিটির রিপোর্টে পুলিশের ভূমিকা বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হচ্ছে, মুর্শিদাবাদে যখন আক্রান্তদের বাড়ি, দোকান ও মন্দির ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তখন পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়। আক্রান্তদের আর্তচিৎকার শুনেও পুলিশ দাঙ্গাকারীদের রুখতে কোনও পদক্ষেপ করেনি।
রিপোর্টে জাফরাবাদে বাবা ও ছেলের খুনের ঘটনার কথাও বিস্তারে জানানো হয়েছে। জানানো হয়েছে, দাঙ্গাকারীরা হরগোবিন্দ দাসের বাড়ি গিয়ে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে দরজা ভাঙে। তার পর বাবা ও ছেলেকে কুড়ুলের কোপ মারা হয়।
রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এই হিংসায় শুধুমাত্র বেতবোনা গ্রামে ১১৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মন্দিরেও ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে সাধারণ মানুষকে নদী পেরিয়ে মালদা জেলায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সমস্ত আক্রান্তদের ক্ষতির পরিমাণ সমান নয়। তাই সবার জন্য একই ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলে সমস্যা মিটবে না। প্রত্যেকের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সমীক্ষা করে তাদের রিপোর্ট দেওয়া উচিত।
বলে রাখি ২০০২ সালে গুজরাতে গোধরা পরবর্তী হিংসায় নরেন্দ্র মোদীর পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠেছিল। গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশেই পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ ওঠায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। দীর্ঘ তদন্তের পরও নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।