জঙ্গলমহলের নানা প্রান্তে ক্রমশ বাড়ছে হাতির তাণ্ডব। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ভেঙে দিচ্ছে ঘরবাড়ি, আহত হচ্ছে মানুষ। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে হাতি ও মানুষের সংঘাত কমাতে জরুরি পদক্ষেপে উদ্যোগী হল রাজ্য বন দফতর। ঝাড়গ্রামে চারটি বনবিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করলেন রাজ্যের শীর্ষ বনকর্তারা।
আরও পড়ুন: আলিপুরদুয়ারে হাতির হানায় মৃতদের ৩৪% নেশাগ্রস্ত ছিলেন, চাঞ্চল্যকর দাবি বন বিভাগের
বুধবার ঝাড়গ্রামের কেন্দ্রীয় নার্সারিতে এই বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল ও মুখ্য বন্যপ্রাণ ওয়ার্ডেন সন্দীপ সুন্দ্রীওয়াল, দক্ষিণবঙ্গের অতিরিক্ত মুখ্য বনপাল নীলাঞ্জন মল্লিক, ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম, খড়গপুরের ডিএফও মনীষ যাদব, রূপনারায়নের ডিএফও শিবানন্দ রাম, মেদিনীপুরের এডিএফও কানু চক্রবর্তী-সহ আরও অনেকে। বন দফতর সূত্রে খবর, হাতি-মানুষ সংঘাত কমাতে দুই দিক থেকে কাজ শুরু হচ্ছে-তাৎক্ষণিক (শর্ট টার্ম) ও স্থায়ী (লং টার্ম) পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রাম, মানিকপাড়া ও গিধনি রেঞ্জের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিকে সৌরচালিত পাওয়ার প্লাস ফেনসিং দিয়ে ঘেরা হবে। কুসুমঘাঁটি, কুসুমডাঙা, ঘটিডুবা, জারালাটা, জোয়ালভাঙা-সহ মোট ১০টি গ্রামকে ঘিরে প্রায় ১০ কিমি ফেনসিং করা হবে। প্রতিটি গ্রামকে আলাদাভাবে ঘেরার পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরে।
বন দফতর জানায়, আগেও ঝাড়গ্রাম শহরে এই ধরনের ফেনসিং করা হয়েছিল, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা অনেক জায়গায় অকেজো হয়ে পড়ে। তাই এবার শুধু ফেনসিং নয়, তার রক্ষণাবেক্ষণেও জোর দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, জামবনি ব্লকের গিধনি এলাকার ৪০ কিমি জঙ্গলজুড়ে আরও শক্তিশালী ফেনসিং করা হবে, যার জন্য ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর আগে বেলপাহাড়ি সীমান্তে হাতির তাণ্ডব ঠেকাতে খোঁড়া হয়েছিল প্রায় ৪৫ কিমি ট্রেঞ্চ। কিন্তু তা বৃষ্টির জলে মজে গিয়ে কাজে আসছে না। তাই এবার সেই পদ্ধতি বাতিল করে পুরো জোর দেওয়া হচ্ছে আধুনিক ফেনসিংয়ের দিকেই। শুধু ফেনসিং নয়, মানুষ যাতে হাতির কাছাকাছি গিয়ে ভিডিয়ো না তোলে বা রিল না বানায়, সেজন্য সচেতনতা প্রচার চালানো হবে। তাতেও কাজ না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বন দফতর জানিয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বন দফতরের লক্ষ্য, হাতির জন্য সারা বছর খাদ্যের সংস্থান করা ও নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় তাদের আটকে রাখার ব্যবস্থা তৈরি করা। এর জন্য এক লক্ষ চারা গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বেল, আম, কাঁঠাল, ডুমুর, বাঁশ—হাতির পছন্দের এমন নানা গাছ লাগানো হবে। ইতিমধ্যে বন দফতরের চারটি নার্সারিতে এই গাছ তৈরি হয়ে গিয়েছে।
জামবনি ব্লকের গিধনি অঞ্চলে প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর এলাকায় হাতির বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে ১৬টি পুকুর খোঁড়া হবে, যার মধ্যে ৫টি ইতিমধ্যেই তৈরি। বাকি ১১টি কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। একটি বড় জলাশয়ও থাকবে। এর জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে ঝাড়গ্রাম বনবিভাগ। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল সন্দীপ সুন্দ্রীওয়াল বলেন, হাতি জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। জোর করে তাদের তাড়ানো নয়, বরং মানুষের সঙ্গে সহাবস্থান বজায় রেখেই সমস্যা সমাধানের পথে হাঁটছে বন দফতর।