১৮৫৪ সাল। পবিত্র ভূমিতে খ্রিস্টানদের অধিকার নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে টানাপোড়েন চলছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্সের। অন্যদিকে অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জোট বাঁধল ব্রিটেন, ফ্রান্স, অটোমান সাম্রাজ্য এবং পিডমন্ট-সার্ডিনিয়া। যুদ্ধ শুরু হল ক্রিমিয়া উপদ্বীপে। যুদ্ধ মানেই আঘাত-প্রত্যাঘাত ও রক্তক্ষয়। এই যুদ্ধেও তেমনটাই হল। ব্রিটিশ মিলিটারি হাসপাতালের অবস্থা হয়ে উঠল শোচনীয়। একের পর এক সেনারা ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ঠিক এই সময় হাসপাতালের নার্সিংয়ের দায়িত্বে এলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গল ও ৩৮ জন নার্স।
আরও পড়ুন - আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে অভিনব বার্তা এই বছর! কেন পালিত হয়? মুগ্ধ করবে ইতিহাস
ফ্লোরেন্স ও ৩৮ জন নার্সের অক্লান্ত পরিষেবা
১৮৫৩ থেকে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত চলেছিল ক্রিমিয়ার যুদ্ধ। ১৮৫৪ সাল থেকে হাসপাতালের দায়িত্বে আসেন ফ্লোরেন্স। আসার পরেই ৩৮ জন নার্সের সাহায্যে স্বাস্থ্য পরিষেবায় আমূল বদল আনেন। তাঁর আসার আগে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল বেডের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়াও পরিবেশ ছিল ভীষণ অস্বাস্থ্যকর। এই পরিস্থিতিতে ফ্লোরেন্স প্রথমেই পুরোটাকে একটি নিয়মের মধ্যে বাঁধলেন।
আরও পড়ুন - পরিচিত মানুষরা যথেষ্ট গুরুত্ব দেন না? ৫ ভুলে হতে পারে এই সমস্যা, শুধরে নিতে হবে
কী কী করেছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গল?
পরিচ্ছন্নতার অভাব ছিল গোটা হাসপাতাল জুড়ে। নাইটিঙ্গল হাসপাতালে গিয়েই প্রথমে গোটা চত্বর সাফসুতরো করলেন সহকর্মীদের সঙ্গে। এর পাশাপাশি শুরু হল স্বাস্থ্যবিধি পালন। অর্থাৎ রোগীদের সেবা করার পর হাত ভালোভাবে ধোওয়ার নিয়ম। এতে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা অনেকটা কমল। এর পর ফ্লোরেন্স মনোযোগ দিলেন রোগীদের খাবার সরবরাহের সদিকে। পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাবার না পেলে রোগীদের সেরে উঠতে সময় লাগবে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী সেরে নাও উঠতে পারেন। তাই রোগীরা যাতে পর্যাপ্ত খাবার পায়, সেদিকে কড়া নজর রাখলেন তিনি।
‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’
আক্ষরিক অর্থেই অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন নাইটিঙ্গল। রোগী পরিষেবা ছাড়াও হাসপাতাল সাফ রাখা, রোগীদের খাবার দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সব দিকেই নজর থাকত তাঁর। রাতেও ঘুমহীন চোখে সতর্ক নজর রাখতেন রোগীদের দিকে। হাতে একটি বাতি হাতে তাঁকে প্রায়ই দেখা যেত রোগীদের পাশে। তাদের যেকোনও প্রয়োজনে সাড়া দিতেন ফ্লোরেন্স। তাই সারা বিশ্বে তিনি আজ পরিচিত ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামে।