সকাল হলেই পুলিশের পোশাক পরে বেরিয়ে যেতেন অঙ্কিত ঘোষ। এলাকায় সবাই জানতেন, পাড়ার এই যুবক এখন কনস্টেবল, পোস্টিং হয়েছে সল্টলেকের বিকাশ ভবনে। পরিবারেও খুশির হাওয়া, ছেলে পুলিশের চাকরি পেয়েছে, এই ভেবে গর্বিত মা-বাবা। সামাজিক মাধ্যমে পুলিশের পোশাক পরে ছবি আপলোড করতেন, সঙ্গে ক্যাপশন দিতেন, ‘ডিউটিতে যাচ্ছি’। কেউ কোনও সন্দেহ করেননি। কিন্তু, শেষপর্যন্ত সামনে আসল সত্যিটা। আসলে ওই যুবক পুলিশই নন। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার শিমুলপুর চৌরঙ্গী এলাকার। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়।
আরও পড়ুন: অচেনা নম্বর থেকে কল, গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে টাকা লুট, কী এই ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট?
জানা যাচ্ছে, অঙ্কিত এক বছর ধরে এলাকার মানুষকে, এমনকী নিজের পরিবারকেও মিথ্যে কথা বলে আসছিলেন। অবশেষে মঙ্গলবার ভুয়ো পরিচয় ফাঁস হতেই অঙ্কিতকে গ্রেফতার করে গাইঘাটা থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, অঙ্কিত আগে পুলিশের চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাতে পাশ করতে পারেননি। কিন্তু, পরিবারের সামনে মিথ্যে বলেন যে নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। তারপর কনস্টেবলের মতো দেখতে একাধিক পোশাক বানিয়ে ফেলেন। সঙ্গে ভুয়ো নেমপ্লেট ও আরও কিছু নকল পরিচয়পত্রও তৈরি করেন। এরপর প্রতিদিন নিয়ম মেনে বাড়ি থেকে বেরতেন, জানাতেন, ‘ডিউটি আছে।’
এই নাটক এতটাই নিখুঁত ছিল যে, প্রতিবেশীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন অঙ্কিত সত্যিই পুলিশ। তাঁকে কনস্টেবলের চোখে দেখতে শুরু করেন সকলে। কেউ কোনও দিন কোনও প্রশ্ন তোলেনি। অঙ্কিতও সাবলীলভাবে পুলিশের নাম করে নানা জায়গায় যাতায়াত করতেন। তবে পুলিশে খবর যায়, এক অল্পবয়সি যুবক সন্দেহজনকভাবে পুলিশের পোশাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গাইঘাটা থানার পুলিশ নজর রাখতে শুরু করে। অঙ্কিত কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে মিশছেন, কী করছেন সবই পর্যবেক্ষণ করছিলেন তদন্তকারীরা।
মঙ্গলবার সুযোগ বুঝে তাঁকে আটকে জেরা করে পুলিশ। নিজের পরিচয় নিয়ে শুরুতে দৃঢ় থাকলেও ধীরে ধীরে গলার স্বর পাল্টে যায়। কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হলে সামনে আসে সত্যি ঘটনা। তিনি স্বীকার করে নেন, আসলে পুলিশ নন। সঙ্গে-সঙ্গে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অঙ্কিতের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে কনস্টেবলের পোশাক, নকল নেমপ্লেট ও বিভিন্ন জাল নথিপত্র। পরিবারের এক সদস্য বলেছেন, তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছেন না। সবাইকে অঙ্কিত জানিয়েছে বিকাশ ভবনে চাকরি করছে।