আজকাল ডায়াবেটিস বা শর্করার রোগ এতটাই সাধারণ হয়ে গেছে যে বাড়িতে বাড়িতে আপনি এর রোগী দেখতে পাবেন। ডায়াবেটিসকে লাইফস্টাইল সম্পর্কিত রোগ বলা হয়, অর্থাৎ আমাদের জীবনযাপন এবং ভুল খাদ্যই কোথাও না কোথাও এর পিছনে দায়ী। ডায়াবেটিসের রোগে আমাদের শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি হওয়া ইনসুলিনকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না, যার ফলে শরীরে দ্রুত ব্লাড শর্করা স্তর বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন আমরা এমন অনেক কিছু খাই, যা ব্লাড শর্করা স্তরকে বাড়িয়ে দেয় এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়। মোটের উপর বললে, প্রতিদিন খাওয়া অনেক এমন জিনিস আছে, যা আপনাকে ডায়াবেটিসের রোগী বানিয়ে দিতে পারে। তাহলে চলুন তাদের সম্পর্কে জানি।
মিষ্টি পানীয় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়
যদি আপনি প্রতিদিন মিষ্টি পানীয় যেমন কোলা, কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিঙ্কস, সোডা বা বোতলজাত জুস পান করেন, তাহলে আপনাকে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। আসলে এই পানীয়গুলিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং ক্যালোরি থাকে, जबकि তাদের পুষ্টির মূল্য সম্পূর্ণ শূন্য। প্রতিদিন বা বলতে গেলে বেশি পরিমাণে এগুলোর ব্যবহার করলে ব্লাড শর্করা স্তর দ্রুত বাড়ে, ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় এবং ওজনও বাড়ে। এই তিনটি বিষয়ই টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
অতিরিক্ত ভাজা খাবার থেকে দূরে থাকুন
যদি আপনি ক্ষুধার সময় প্রায়ই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পকোড়া, ভাজা মুরগি বা অন্য কোন ভাজা স্ন্যাক্স খেতে পছন্দ করেন, তাহলে আপনার এই অভ্যাস আপনাকে ডায়াবেটিসের রোগী বানিয়ে দিতে পারে। এই ভাজা খাবারে প্রচুর পরিমাণে অস্বাস্থ্যকর ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এগুলি খেলে ওজন দ্রুত বাড়ে, সাথে কোলেস্টেরল স্তরও বৃদ্ধি পায়। এই দুটি বিষয়ই শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি ভাল পরিবেশ তৈরি করে, যা ডায়াবেটিস হিসেবে প্রকাশ পায়।
মিষ্টি খাবার থেকে বিরত থাকুন
কিছু মানুষের মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ হয়। দিনभर তারা অনেক মিষ্টি জিনিস খেয়ে ফেলে, সাথে খাবারের পরেও তাদের কিছু মিষ্টি প্রয়োজন হয়। যদি আপনি এই ধরনের লোকদের মধ্যে একজন হন, তাহলে আপনার এই অভ্যাস যত দ্রুত সম্ভব পরিবর্তন করা উচিত। আসলে প্রতিদিন মিষ্টি জিনিস যেমন আইসক্রিম, ক্যান্ডি, মিষ্টি বা কোন স্ন্যাক খাওয়া ব্লাড শর্করা স্তর দ্রুত বাড়িয়ে দেয় এবং ওজনও বাড়ায়। নিয়মিত এগুলোর ব্যবহার করলে আপনাকে ডায়াবেটিসের রোগও হতে পারে।
আলু সীমিত পরিমাণে খান
ভারতীয় বাড়িতে আলু খুবই জনপ্রিয়। যেকোনো সবজিতে আলু থাকে, সাথে এর নিজস্ব শতাধিক ডিশ তৈরি হয়। তবে আলুর ব্যবহার সীমিত পরিমাণে করাই ভালো, নাহলে এটি আপনাকে শর্করার রোগী বানিয়ে দিতে পারে। আসলে আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি, অর্থাৎ এটি খেলে ব্লাড শর্করা স্তর দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। এভাবে যখন আপনি প্রতিদিন আলু খান, তখন এটি ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় এবং অবশেষে শর্করার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।
রিফাইন্ড শস্যের ব্যবহার কম করুন
প্রতিদিন আমরা অনেক রিফাইন্ড শস্য বা অন্ন এবং সেগুলি থেকে তৈরি জিনিস খেয়ে থাকি, যেমন- সাদা রুটি, সাদা ভাত, ময়দা থেকে তৈরি জিনিস ইত্যাদি। রিফাইন্ড শস্যগুলি দীর্ঘ প্রক্রিয়াকরণের পর তৈরি হয়, যাতে তাদের ফাইবার এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি শেষ হয়ে যায়। এগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও অনেক বেশি, যার ফলে ব্লাড শর্করা স্তর দ্রুত বাড়ে। যদি আপনি দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিদিন এই ধরনের জিনিস খেয়ে থাকেন, তাহলে এটি ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।