সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ কমানো নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্য ও রেলের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার আদালত উভয় পক্ষকে ভর্ৎসনা করেছে। এবার চলতি বছরের মধ্যেই ঝিলের দূষণ কমাতে অবিলম্বে নিকাশি পরিশোধন প্ল্যান্ট নির্মাণের নির্দেশ দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) এবং নগরোন্নয়ন বিভাগ, হাওড়া পুরসভা এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলকে এই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে এনজিটি।
আরও পড়ুন: সাঁতরাগাছি বিল নিয়ে মুখ্যসচিবের হলফনামায় বার বার বিভ্রান্তি, অসন্তুষ্ট আদালত
মামলায় বলা হয়, ঝিলের আশেপাশের বাড়িঘর এবং বসতি থেকে তরল বর্জ্য বন্ধ করার জন্য সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা নিকাশি পরিশোধন প্ল্যান্ট নির্মাণ এবং চালু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তরল বর্জ্য ঝিলের জলে মেশার ফলে কচুরিপানা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জল দূষণ হচ্ছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ৬০-৭০ শতাংশ কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু, কয়েক মাসের মধ্যেই পুরো ঝিল কচুরিপানায় ঢেকে যায়। এর ফলে সেখানে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে। কারণ পরিযায়ী পাখিরা উড়ে যাওয়ার সময় ঝিলের জল দেখতে পায় এবং সেখানে বিশ্রাম ও বাসা তৈরির জন্য আশ্রয় নেয়।
২০১৬ সালে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জাতীয় পরিবেশ আদালতে এ নিয়ে মামলা করেন। তিনি হাওড়া পুরসভা, দক্ষিণ-পূর্ব রেল এবং পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের বিরুদ্ধে ঝিলের দূষণ রোধে ব্যর্থতার অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, হাওড়া পুরসভা এলাকা থেকে অপরিশোধিত বর্জ্য ঝিলে মেশার ফলে জল দূষিত হচ্ছে।
শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল ২০২২ সালের জুলাই মাসে হাওড়া পুরসভাকে চার মাসের মধ্যে একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের নির্দেশ দেয়। রেলকে এটি নির্মাণের জন্য জমি প্রদান এবং ঝিলের এলাকা থেকে জবরদখল হঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসককে এই ধরনের উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে বলা হয়েছিল।
যদিও মামলায় সব পক্ষ হলফনামায় দিয়ে বলেছিল যে একটি ডিপিআর সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্ল্যান্ট নির্মাণ শুরু হয়নি। তখন সুভাষ দত্ত আবার আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রকৃতি-বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা এনজিওর সদস্যরা বারবার দাবি করে আসছেন ঝিলের জলে অপরিশোধিত তরল বর্জ্য বন্ধ হলেই কচুরিপানার দ্রুত বৃদ্ধি বন্ধ হবে। আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি এবিষয়ে মুখ্যসচিবকে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে বলেছে আদালত।