জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলার পাল্টা জবাবে পাকিস্তান থেকে সমস্ত ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। তারপরেও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া বা শ্রীলঙ্কার মতো তৃতীয় কোনও দেশের মাধ্যমে ভারতীয় বাজারে পাক পণ্যের প্রবেশ আটকাতে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে শুল্ক দফতর। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত দিয়ে। কিন্তু পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর সেই সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে সংঘাত, তিক্ততা বেড়েই চলেছে। আর সেই আবহেই ভারত পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। (আরও পড়ুন: কিস্তিমাতের লক্ষ্যে 'দান' দিল্লির, পাকিস্তানকে পিষে ফেলতে ঘুঁটি সাজাচ্ছে ভারত)
আরও পড়ুন: চিন্ময় প্রভুকে নিয়ে নয়া আদেশ বাংলাদেশের আদালতের, এবার কী হবে হিন্দু সন্ন্যাসীর?
এই আবহে শুল্ক দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সূত্র মারফত খবর কমপক্ষে ৫০ কোটি ডলারের পাকিস্তানি ফল, শুকনো খেজুর, বস্ত্র, সোডা অ্যাশ, সৈন্ধব লবণ এবং চামড়ার জিনিসপত্র এখনও তৃতীয় কোনও দেশে ভারতীয় বাজারে প্রবেশের জন্য পুনরায় প্যাকেজিং এবং লেবেল করা হচ্ছে। এভাবে পাকিস্তান থেকে সরকারি চ্যানেল মারফত ওই পণ্যগুলি তৃতীয় দেশগুলির মাধ্যমে ভারতে আসে। কিন্তু ভারত সরকার ২ মে পাকিস্তান থেকে সমস্ত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। যার জেরে পাকিস্তানের রপ্তানি বন্ধ করে সে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু এবং দুর্বল হয়ে পড়বে। (আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চে জঙ্গি আস্তানা থেকে আইইডি উদ্ধার করল নিরাপত্তা বাহিনী)
আরও পড়ুন-ট্রাম্পের কোপে বলিউডের সিনেমাও! ১০০% শুল্ক চাপানোর ঘোষণা মার্কিন প্রশাসনের
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তানের এমএফএন মর্যাদা প্রত্যাহার করে ভারত। এই সঙ্গে পাকিস্তানি পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। তাজা ফল, সিমেন্ট, পেট্রোপণ্য, খনিজ ছিল সেই তালিকায়। এমনকি বাণিজ্যক্ষেত্রে ভারতের সাহায্য়প্রাপ্ত দেশ হিসেবে যে অগ্রাধিকার পেত পাকিস্তান, তাও বাতিল করা হয়েছিল। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ৩,৫৩৩.৬০ কোটি টাকার পণ্য ভারত থেকে রপ্তানি হয়েছে পাকিস্তানে। অন্যদিকে, ভারতে আমদানি হয়েছিল মাত্র ১৬.৬৮ কোটি টাকার পাকিস্তানি পণ্য। গত পাঁচ বছরে ২০২২ সালে সব থেকে বেশি ২৬.৬২ কোটি টাকার পাকিস্তানি পণ্য ভারতে আমদানি হয়েছিল। একটি বিষয় স্পষ্ট যে ভারতের বিভিন্ন পণ্যের উপর পাকিস্তান যতখানি নির্ভরশীল, পাকিস্তানি পণ্যের তত গুরুত্ব নেই ভারতে।এই প্রসঙ্গে এক আধিকারিক জানান, '২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর এক বছরের মধ্যে ভারতে পাকিস্তানের রপ্তানি ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে যায়। সিমেন্ট, লবণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'সন্ত্রাস এবং বাণিজ্য একসঙ্গে চলতে পারে না।'
আরও পড়ুন: সেনাকে সাহায্য করবে বলেও পালানোর চেষ্টা, নদীতে ঝাঁপিয়ে মৃত্যু জঙ্গি আশ্রয়দাতার
গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, 'পাকিস্তানে উৎপন্ন বা পাকিস্তান থেকে সরবরাহ হওয়া সমস্ত পণ্য, অবাধে তা আমদানিযোগ্য হোক বা না হোক, সবকিছুর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আমদানি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হল। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। দেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং জননীতিকে সামনে রেখে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ভারত সরকারের অনুমোদন ছাড়া এর অন্যথা হবে না, কোনও ছাড়পত্র মিলবে না।' পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে ৪ লক্ষ ২০ হাজার ডলারের পণ্য় আমদানি করে ভারত, তার একবছর আগেও ২.৮৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল পাকিস্তান থেকে। পাকিস্তানে ভারতীয় পণ্যের রফতানিও তলানিতে এসে ঠেকেছে, ১.১ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে হয়েছে ৪৪৭.৭ মিলিয়ন ডলার।