থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মহম্মদ ইউনুসের প্রতিনিধি ডঃ খলিলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে। সেই সময়ই থেকেই জল্পনা তৈরি হয়েছিল তাঁদের সেই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে। সেই বৈঠক সম্পন্ন হওয়ার বেশ কয়েকদিন পরে এই নিয়ে মুখ খুললেন ইউনুসের প্রতিনিধি। ৮ এপ্রিল ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে খলিলুর রহমান বলেন, 'অজিত ডোভালের সঙ্গে আমার অনেকক্ষণ আলাপ হয়েছে। আমরা আলাপে প্রায় মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম।' কিন্তু কী কথা হল দু'জনের?
খলিলুর এরপর বলেন, 'ডোভালের সঙ্গে আমার কী কথা হয়েছিল, তা সব জানাব, আমার স্মৃতি কথায়।' এভাবে বলব বলেও ডোভাল-বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে সরাসরি মুখ না খুলে অবশ্য রহস্য ঘনীভূত করলেন খলিলুর। এরপর ইউনুসের প্রতিনিধি বলেন, 'বিমসটেক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্টভাবে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যে সম্পর্ক, সেটা কোনও ব্যক্তি কিংবা দলের সঙ্গে নয়। এটা রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক। আমরা কিন্তু তাই মনে করি। এটা দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক এবং সেই ভিত্তিতেই আমরা দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক এগিয়ে নেব।'
চিনে গিয়ে সম্প্রতি উত্তরপূর্ব ভারতের নাম করে উস্কানিমূলক মন্তব্য কর শোনা গিয়েছিন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসকে। এই আবহে ভারতের একাধিক রাজনীতিবিদ তোপ দেগেছিলেন ইউনুসকে। এরই মাঝে আবার ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত বিমসটের শীর্ষ সম্মেলনে পাশাপাশি দেখা গিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনুসকে। পরে তাঁরা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও বসেছিলেন প্রথমবারের মতো। এই সবের মাঝেই বিমসটেক সম্মেলনের নৈশভোজ চলাকালীন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি খলিলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে। থাই প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রার আয়োজিত বিশেষ নৈশভোজে বিমসটেক দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধান এবং অন্যান্য প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেই একটি টেবিলে অজিল ডোভালের সঙ্গে এক টেবিলে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে খলিলুর রহমানকে। দু'জনকে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতেও দেখা গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের বিভিন্ন নিরাপত্তা বিষয়ক জটিলতা সামলেছেন ডোভাল। মায়ানমার, পাকিস্তানে সার্জিকাল স্ট্রাইক থেকে শুরু করে ডোকলামের সমস্যা সামলানোয় ডোভালের বড় ভূমিকা ছিল বলে দাবি করা হয়। এদিকে পাকিস্তানে এয়ারস্ট্রাইকেও ডোভালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এদিকে ২০১৯ সালে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পরে ডোভাল নিজে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছিলেন। এবং এর আগে সরকারের তরফ থেকে নিরাপত্তাজনিত অঙ্ক কষেছিলেন সেই ডোভাল। এদিকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিগত মাসগুলিতে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। এদিকে বাংলাদেশ সরকারে উপদেষ্টা থাকা মাহফুজ আলমের মতো ব্যক্তি ভারত ভাগ করার মতো বার্তা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্টও করেছেন। বাংলাদেশে মৌলবাদ মাথাচাড়া দেওয়ায় সেখানে ভারত বিরোধী মনোভাব বেড়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি প্রতিনিধি খলিলুরের সঙ্গে ডোভালের এই কথাবার্তায় জল্পনা তৈরি হয় বিস্তর।
এর আগে বাংলাদেশি সেনার মধ্যে অভ্যুত্থানের জল্পনা চলাকালীনও বারবার ভারতের নাম নিয়ে আক্রমণ শানাতে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের নতুন সব রাজনীতিবিদদের। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উদ্যোগী হতে দেখা গিয়েছে ইউনুসের সরকারকে। তবে এরই মাধে আবার চিনে গিয়ে উত্তরপূর্ব ভারত নিয়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য করে বসেছিলেন ইউনুস নিজেই। রিপোর্ট অনুযায়ী, চিন সফরে উত্তরপূর্ব ভারতের ৭ রাজ্যকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন ইউনুস। যদিও পরে ঢাকার তরফ থেকে দাবি করা হয়, ইউনুসের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এরই মাঝে আবার ত্রিপুরায় বিজেপির শরিক তিপ্রা মোথার নেতা তথা ত্রিপুরার রাজা প্রদ্যোত মণিক্য আবার বাংলাদেশ ভাগ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। যার জেরে দুই দেশের সম্পর্কে চিড় আরও চওড়া হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ইউনুসের প্রতিনিধির সঙ্গে ডোভালের কী কথাবার্তা হয়েছে, তা নিয়ে উৎসাহ ছিল অনেকেরই।