সোমবার, ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের ৫৩তম বিজয় দিবস। এই দিনেই ভারতীয় সেনার মদতে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়। জন্ম হয় বাংলাদেশের। বিজয় দিবসের আগে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্ফোরক তসলিমা নাসরিন। তাঁর ফেসবুক পোস্টে ঝড়ে পড়ল হতাশা এবং ক্ষোভ।
মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতীকালীন বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সরব তসলিমা। সে দেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিয়ে বারংবার গর্জে উঠেছেন ‘লজ্জা’র স্রষ্টা। এবার সরাসরি ইউনূস সরকারকে বিঁধলেন তসলিমা। সে দেশের তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে বিজয় দিবসের যে পোস্টার ছাপিয়ে বিলি করা হচ্ছে তা দেখে তাজ্জব তসলিমা নাসরিন। বাংলাদেশের কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ নিহত আবু সাঈদের ছবি পোস্টারে দেখে কটাক্ষ করেন তসলিমা। লেখিকার দাবি, আবু সাঈদ ‘শিবিরকর্মী’ অর্থাৎ ‘জামাতে ইসলামির লোক’। এবং শিবিরকর্মীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল শুধু তাই নয়, বরং লাখ লাখ স্বদেশিকে হত্যা আর ধর্ষণ করেছে তারা।
ফেসবুক পোস্টে ঠিক কী লিখেছেন তসলিমা?
তসলিমার কথায়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে বিজয় দিবসের পোস্টার ছাপানো হয়েছে। বিজয়ের ৫৩ বছর পর ছাপানো এই পোস্টারে সবচেয়ে বড় ছবিটি ছাপা হয়েছে চার মাস আগে নিহত এক শিবিরকর্মীর। শিবিরকর্মীরা অর্থাৎ জামাতে ইসলামির লোকেরা কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। তারা গণহত্যাকারী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে স্বদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করতে আর ধর্ষণ করতে সহযোগিতা করেছে। আর যাই চাক তারা, বাংলাদেশের বিজয় চায়নি। অথচ আজ বিজয়ের পোস্টারে বিজয়ের বিপক্ষের এক লোক বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহা আমার দুর্ভাগা বাংলাদেশ!’
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হাসিনা সরকারের পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল। ঘটনা ১৬ই জুলাইয়ের। যে ঘটনার পর সে দেশের কোটা-বিরোধী আন্দোলন চরমে পৌঁছায়। শেষমেষ গদিচ্যুত হন হাসিনা। প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে এখন ভারতের আশ্রিতা তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ পাক সেনার আত্মসমর্পণ করেছিল। ওই দিনটিতে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে। তারপরেও চলতি বছরও ফোর্ট উইলিয়ামের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের আসার কথা রয়েছে। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভুয়ো মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠানো হবে, এমন আশঙ্কাও ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন তসলিমা।
তিনি লেখেন, ‘‘কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উদযাপন করা হবে ১৬ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। এতে থাকবেন ৭১ সালে যে ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, তাঁদের কয়েকজন। বাংলাদেশ থেকেও নাকি প্রতিনিধিদল আসবে । এই প্রতিনিধিদলে যেন থাকেন সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নয়। বিভিন্ন সরকার কিন্তু স্বজনদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট বিতরণ করেছেন নানা রকম সুবিধের লোভে।’