ভালোবাসা না কখনও মেনেছে বয়সের গণ্ডি, না বাধা পেয়েছে সমাজের চোখ রাঙানিতে। একে-অপরের প্রতি টান থাকলে, ভেঙে দেওয়া যায় সব আগল। আর তা প্রমাণ করেছেন অহনা দত্ত। মাত্র ১৯ বছর বয়সে কাজ শুরু বাংলা সিরিয়ালে। আর প্রথম মেগা অনুরাগের ছোঁয়ার সেটেই ভালোবাসা কড়া নাড়ে দরজায়। প্রেমে পড়েন পেশায় মেকআপ আর্টিস্ট দীপঙ্কর দে-র। তবে অহনার এই ভালোবাসায় মত ছিল না তাঁর মা চাঁদনীর। পারিবারিক কলহ চলে আসে প্রকাশ্যে। সোশ্য়াল মিডিয়ার একাংশ বাস্তবেই ভিলেন বানিয়ে দেয় অহনাকে। কঠিন সময়ে পাশে ছিলেন দীপঙ্কর। ছিলেন দীপঙ্করের মা-বাবাও। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আইনি বিয়ে। আর ২০২৫-এর মাঝামাঝি কোলে আসবে প্রথম সন্তান। মাতৃত্বের জার্নি, কাজ, ভবিষ্যত পরিকল্পনা সব নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা-র সঙ্গে কথা বললেন অহনা দত্ত।
প্রশ্ন: আসন্ন সন্তানের জন্য অনেক শুভেচ্ছা। দিনগুলো কেমন কাটছে?
অহনা: ভালোই কাটছে। আসলে অতটা চাপ অনুভব করছি না এখনও। সব ঠিকঠাকই চলছে।
প্রশ্ন: দীপঙ্করের কাছ থেকে কতটা স্পেশাল ট্রিটমেন্ট পাচ্ছ?
অহনা: যেমন ছিলাম, সেরকমই। আমার প্রেগন্যান্সি কন্ডিশন একদম স্বাভাবিক। তাই গোটা বিষয়টাও যতটা স্বাভাবিক রাখা যায়, ততই ভালো। আমরা তো ওয়ার্কিং ওম্যান। আমাদের কাছে কাজটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই এটাও। দুটোকে ব্যালেন্স করে চলাটাই আসল! আর দীপঙ্করের যত্ন নিয়ে আলাদা করে কী বলব। আমরা এক-দেড় বছর আগে যেরকমটা ছিলাম, এখনও তেমনই আছি। আগেও যেমন আমার যত্ন নিত, এখনও নেয়। কারণ ওর কাছে সবসময়, আমি সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট (হাসি)।
প্রশ্ন: তুমি তো শ্যুটিংও করছ অনুরাগের ছোঁয়ার। সেখানে সবাই কতটা খেয়াল রাখছে?
অহনা: ফ্লোরে সবাই জানে এখন বিষয়টা। আর আমার পরিচালক যে, তিনিও চেষ্টা করছেন একটু বুঝেশুনে শিফট রাখার। কিন্তু আমার কী হয়, আমি যখন সিন করি, তখন চাই নিজের ১০০ শতাংশ দিতে। ভুলে যাই যে, এখন কী কন্ডিশন। (হাসতে হাসতে) হয়তো খুব জোরে লাফিয়ে পড়লাম, চিৎকারের দৃশ্যে বেশিই জোরে চিৎকার করে ফেললাম। তারপর বুঝি, না আমার এখন এত জোরে চিৎকার করাটা ঠিক হচ্ছে না। আমাকে সেটেও সবাই বলে, ‘এখন এতটা না! যতটা শরীর মেনে চলা যায়, ততটাই করবে। তার বেশি দরকার নেই।’ ওরা ভীষণ খেয়াল রাখছে, ভীষণ সাবধান রাখছে।

প্রশ্ন: এর পরে কী পরিকল্পনা?
অহনা: এখন যতদিন শ্যুটিং করতে পারি করব। ডেলিভারির পর আমার ইচ্ছে আছে একটা গ্যাপ নেওয়ার। আসলে ডেইলি সোপে তো রোজ শ্যুটে আসতে হয়। তবে কাজ করব। ফোটোশ্যুট বা যেরকম শো করি, সেগুলো করব। এবার সবটাই শরীরের উপর। কোনও ইমার্জেন্সি হলে তো কিছু করার নেই।
প্রশ্ন: ২২ বছর বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত! কখনও মনে হয়নি এত ছোট বয়সে সন্তানের দায়িত্ব নেওয়াটা কঠিন হতে পারে?
অহনা: না একেবারেই না। আমি তো মনে করি যে আমি সব কিছু করতে পারি। আর শুধু আমি নই, সব মহিলাই সব করতে পারে। সত্যি কথা বলতে, ২০ থেকে ২৪ বছর হল গর্ভধারণের জন্য সঠিক সময়। যদিও প্রথমে অতটা ভাবিনি। কিন্তু পরে আমি যখন এটা নিয়ে পড়েছি, তখন দেখেছি এটাই সব থেকে ভালো সময়। একজন মহিলা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যবান থাকে, জটিলতা কম থাকে, এনার্জি বেশি থাকে। সব মিলিয়ে পরে আমি যখন আমাদের এই সিদ্ধান্তকে এগিয়ে নিয়ে গেলাম, দেখলাম এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। দেখো ভয় তো সব বয়সেই লাগে। ৩০-এ বাচ্চা নিলেও লাগে, ৪০-এ বাচ্চা নিলেও লাগে। কারণ তুমি একদম নতুনভাবে সবটা শুরু করছ। এত বড় একটা দায়িত্ব। ভয়ের তো আর কোনও বয়স হয় না (হাসি…)।
প্রশ্ন: তুমি যেদিন থেকে প্রেগন্যান্সির ঘোষণা করেছ, সেদিন থেকে আবার যেন নতুন করে নেগেটিভিটি শুরু হয়েছে চারদিকে। এসব দেখে মন খারাপ তো হয়ই। কী করো তখন?
অহনা: বিষয়টা হচ্ছে, আমার কোটেশন নিয়ে কেউ লিখছে, কোনও নিউজ মিডিয়া, সেগুলো আমি পড়ি। আমার উপর প্রভাব ফেলে। আমি যখন দেখি, আমার বলা কথা না, আমার বা আমার স্বামীর বলা কথা না, কোনও তৃতীয় ব্যক্তি বলেছে, না সেগুলো আমি পড়ি, না সেগুলো আমার উপরে কোনও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে হ্যাঁ, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তো সবই চোখে আসে। কিন্তু আমার এখন এসবে কিছু যায় আসে না। আমার কাছে, আমার স্বামী ছাড়া বাদবাকি সবাই অস্তিত্বহীন। কে কী বলছে, কী লিখছে, কী ভাবছে, আমার কিছুই যায় আসে না। আর আমাদের লড়াইয়ের ভাগিদার কিন্তু আমরাই। আজ অবধি যা করেছি, সে লিভ-ইন হোক, বিয়ে হোক, বাড়ি কেনা হোক, যা করেছি নিজেদের দমে করেছি। নিজেদের টাকায় করেছি। রক্ত জল করে, ঘাম ফেলে করেছি। ভগবানের আশীর্বাদে কাওকে বলতে হয়নি, আমাদের সাহায্য করো। হয়তো আগামী দিনে বলতে হতে পারে। তবে আমাদের লড়াইটা আমাদেরই। এইটুকুই।

প্রশ্ন: প্রথম যখন ইউএসজি-তে দেখলে হবু সন্তানকে, কেমন অনুভূতি হয়েছিল?
অহনা: ও গড! এটা তুমি একটা ভালো জিনিস জানতে চেয়েছ। আমি যখন প্রথমবার দেখেছিলাম যে, আমার মধ্যে একটা জীবন্ত প্রাণ, আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম। আমার ডাক্তার বলছে, ‘এ কী এরকম করতে নেই’! ওই মুহূর্তটা ভীষণ স্পেশাল। এটা না আসলে বলে বোঝানো অসম্ভব। যারা এই মুহূর্তটার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তাঁরা বুঝতে পারবেন। এই পুরো প্রেগন্যান্সি জার্নির সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত আমার কাছে ইউএসজি-র সময়টা। ওই সময়টাই তো দেখতে পাই ওকে। বাদবাকি সময়টা তো শুধু অনুভব করতে পারি। ডাক্তারকে অনুরোধ করায় দীপঙ্করকেও দেখতে দিয়েছে।
প্রশ্ন: বেবি কিক বা নড়াচড়া অনুভব করতে পারছ?
অহনা: না সেভাবে না। সবে তো ৫ মাসে পা রাখছি। তবে হালকা কিছু যেন নড়াচড়া করছে, যেন কোনও প্রজাপতি উড়ে যাচ্ছে। একটু টিঙ্গলিং সেনসেশন। খুব কিছু না এখনও অবধি। ওইটুকুই।
খুব ভালো থেকো। সব খুব ভালো হোক। আরও একবার শুভেচ্ছা তোমাকে।
অহনা: ধন্যবাদ।