'রনিতকে লাথি মেরে বাস থেকে বের করে দিই…', লাগানের শ্যুটিংয়ে কেন এমন করেন অপূর্ব লাখিয়া?

আমির খান অভিনীত ‘লাগান’ ভারতের অন্যতম চর্চিত ছবি। দেশাত্মবোধ ও ক্রিকেটের প্রতি ভারতীয়দের আবেগ মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল এই ছবির হাত ধরে। ব্রিটিশদের শাসকদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের ক্রিকেট জয়ের ‘রূপকথা’ এই ছবির প্রতি দৃশ্যে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সর্বহারা হত দরিদ্র গ্রামবাসীদের তিন বছরের বাকি থাকা কর মুকুব হতে পারে ব্রিটিশ সরকারের কেবল এক শর্তপূরণে। আর তা হল ক্রিকেট খেলায় তাঁদের হারানোয়। কিন্তু কোনও দিনও ক্রিকেট ব্যাট ছুঁয়ে না দেখা গ্রাম্য যুবকরা কীভাবে পূরণ করে সেই শর্ত? তাই এই ছবির মূল উপজীব্য, যা আজও দর্শকদের কাছে সমান ভাবে সমাদৃত। তবে এই ছবির গল্পে যেমন কঠোর পরিশ্রমের আভাস আছে, তেমনই বাস্তবে ছবির শ্যুটিংয়েও ততটাই খাটতে হয়েছে কলাকুশলীদের। আর এর মাঝেই তৈরি হয়েছে নানা মুহূর্ত। 'লাগান'-এর শ্যুটিংয়ের সেই সব অজানা মুহূর্তের বেশ কিছু গল্প ভাগ করে নিয়েছেন পরিচালক অপূর্ব লাখিয়া। যদিও 'লাগান'-এ তিনি পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকরের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন। ফ্রাইডে টকিজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি 'লাগান'- এর শ্যুটিংয়ের সময়ের নানা কথা ভাগ করে নেন। এই ছবির শ্যুটিংয়ের সময় তিনি ৮০ জনের জন্য প্রথম কল শীট তৈরি করেছিলেন। অপূর্ব লখিয়া জানিয়েছিলেন যে, আমির-সহ সবাই তাঁদের নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার না করে একটি বাসে করে শ্যুটিংয়ে যেতেন। যাতে সবাই একই সময় পৌঁছে যান তাই। আমির দেরি করা একদম পছন্দ করতেন না। আরও পড়ুন: তথাগতর আগেই প্রেম সুমিতের সঙ্গে, সব বদায় চুমু! ‘বিয়ে হবে না বিচ্ছেদ বলা মুশকিল’, দাবি ঋতাভরীরতাই সেই কথা মাথায় রেখে যে বহু তলে কলাকুশলীরা শ্যুটিং চলাকালীন ছিলেন তার প্রতিটি ফ্লোরে অপূর্ব বড় ঘড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন। যাতে পুরো কাস্ট সময় মতো হাজির হতে পারেন। আগে থেকেই অপূর্ব সবাইকে সময় বলে রাখতেন সময়। তাছাড়া এটাও বলা ছিল যে বাস প্রতিদিন সময় মতো ছাড়বে। কোনও কারণে যদি কারুর দেরি হয় সেক্ষেত্রে তাঁর জন্য অতিরিক্ত তিন মিনিট অপেক্ষা করা হবে, তবে তার মধ্যে কেউ এসে পৌঁছতে না পারলে বাস ছেড়ে দেওয়া হবে।সেই সময় অভিনেতা রণিত রায়ের নিরাপত্তারক্ষীদের সংস্থার উপর দায়িত্ব ছিল এই ছবিতে তারকাদের নিরাপত্তার। যেহেতু এত বড় স্টারকাস্ট, তার উপর বিদেশি অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও ছিলেন তাই নিজে গুজরাতে হাজির হন রণিত। তখন অবশ্য তাঁর এত জনপ্রিয়তা ছিল না। রণিত নিজে আমিরের নিরাপত্তার দায়িত্বও নিয়েছিলেন। কিন্তু এর পরই ঘটে এক কান্ড, আমির খান নিজেই দেরি করেন। আরও পড়ুন: বিয়ের ১ মাস! ‘একটু বউকে নিয়ে…’,শ্বেতার সঙ্গে একান্ত মুহূর্তের ছবি দিলেন রুবেলতৃতীয় দিনে আমির নিজেই দেরি করে ফেলেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী বাস অতিরিক্ত ৩ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করবে না। আর অপূর্ব সবার ক্ষেত্রেই এক নিয়মে বিশ্বাসী, সে তিনি যত বড় মাপেরই অভিনেতা হন না কেন। তাই অপূর্ব বাস ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ করেন। এদিকে রণিত যেহেতু আমিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি আমির না এলে বাস যেন না ছাড়ে সেটাই চেষ্টা করতে থাকেন।কিন্তু এর জন্য বাকিদের কাছে ভুল বার্তা যাবে ভেবে অপূর্ব ড্রাইভারকে বলেন গাড়ি ছেড়ে দিতে। এই প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, ‘আমি ড্রাইভারকে আমিরকে রেখেই চলে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু সে তা করতে চাইছিল না। রনিত বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে আমিরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। একটা সময় আমি রনিতকে লাথি মেরে বাস থেকে বের করে দিই। তারপর ড্রাইভারের ঘাড় ধরে বলি, ‘তুমি ড্রাইভিং শুরু না করলে আমি তোমার ঘাড় ভেঙ্গে দেব।’ তারপর বাস চলতে শুরু করে। আমির এবং রণিত সেখানে পৌঁছান প্রায় দুই ঘন্টা পরে অন্য একটি গাড়ি করে।’পরিচালক আরও বলেন, ‘সবাই আমাকে বলেছিল, গাড়িটি নিয়ে ফিরে যেতে, কিন্তু আমির কখনও কিছু বলেননি আমাকে। তবে এর পর থেকে আর কেউ দেরি করতেন না।’