একেই আকাশের মুখ ভার ছিল। যার জেরে সেঞ্চুরিয়নের উইকেটে পুরোদমে সুইং, বাউন্সে সাহায্য পেয়েছেন পেসাররা। আর মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারতের প্রথম টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগেই তাই পরিস্থিতি বুঝে বল করতে নেমে পড়লেন ভারতের হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়। হয়ে গেলেন মিডিয়াম পেসার। সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বক্সিং ডে টেস্টের আগে এমন অপ্রত্যাশিত দৃশ্য ধরা পড়েছে।
দ্রাবিড় যখন নিজে ক্রিকেটার হিসাবে খেলতেন, তখন তিনি পার্ট-টাইম স্পিন বল করতেন। তবে এবার একজন মিডিয়াম পেসার হিসাবে আবির্ভূত হন ভারতের হেড কোচ। দ্রাবিড়ের পাশাপাশি বিরাট কোহলিকেও টসের আগে প্রস্তুতি সেশনে মিডিয়াম-পেসার হিসাবে বোলিং করতে দেখা গিয়েছে।
ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় বাঙ্গার, যিনি দ্রাবিড়ের সঙ্গে এক সময়ে খেলতেন, তিনিও প্রস্তুতি সেশনে ভারতের প্রধান কোচকে মিডিয়াম পেসার হিসাবে বল করতে দেখে অবাক হয়ে যান। বাঙ্গার বলেন, ‘একজন প্লেয়ার হিসাবে ওকে (দ্রাবিড়কে) যা যা করতে বলা হয়েছে, তার বেশির ভাগটাই ও পালন করেছে। ব্যাটিং ওপেন করেছে, ৩, ৫, ৬-এ ব্যাটিং করেছে, উইকেট কিপিং করেছে। তবে এই বিষয়টি (মিডিয়াম পেসার হিসাবে বল কপা) দেখে আমি অবাকই হয়েছি। আমি কখনও এরকম বল করতে রাহুল দ্রাবিড়কে দেখিনি। কিন্তু এটা করা সব সময়েই ভালো। কারণ কোচ হিসাবে আপনি এমন কিছু করছেন, যেচা দেখতে কেউ অভ্যস্ত নন। এবং ওর অ্যাকশনে কোনও ভুল নেই, ওকে স্বচ্ছন্দ মনে হচ্ছিল। তবে ওকে একটু গতি যোগ করতে হবে। এছাড়া বাকি সবটা বেশ ভালো মনে হয়েছে।’
যাইহোক মঙ্গলবার টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ভারত। টেস্টের প্রথম দিনই কার্যত ল্যাজেগোবরে দশা হয় টিম ইন্ডিয়ার। প্রোটিয়া পেসারদের আগুনে বাউন্সে তাসের ঘরের মতোই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। প্রথম তিন ব্যাটার- রোহিত শর্মা, যশস্বী জয়সওয়াল এবং শুভমন গিলের স্কোর যথাক্রমে ৫, ১৭, ২। এর পর কিছুটা হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন বিরাট কোহলি এবং শ্রেয়স আইয়ার মিলে। কিন্তু, সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কোহলি ফেরেন ৩৮ রানে। শ্রেয়স করেন ৩১। শেষের দিকে কে এল রাহুলের লড়াইয়ের হাত ধরে দু'শোর গণ্ডি টপকায় ভারত।
আরও পড়ুন: আঙুল তুলে রাহুলকে চমকে, ক্ষোভ উগরালেন জানসেন, পাল্টা গান্ধীগিরি কেএল-এর
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরে বিরাট কোহলি ও শ্রেয়স আইয়ার আউট হয়ে গেলে, ভারতের ইনিংসকে সামলানোর দায়িত্ব পড়ে রাহুল ও শার্দুল ঠাকুরের কাঁধে। রাহুল সাবলীল ব্যাট করছিলেন। মারার বল মারছিলেন। ছাড়ার বল ছাড়ছিলেন। শার্দুলও ইতিবাচক ব্যাট করছিলেন। কিন্তু শার্দুল বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। ২৪ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। রাহুল অবশ্য দিনের শেষে ৭০ রানে অপরাজিত থাকেন। তবে বৃষ্টির জেরে ৫৯ ওভারের পরেই খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ভারত ৮ উইকেট হারিয়ে ২০৮ রান করে। প্রোটিয়াদের হয়ে একাই ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন কাগিসো রাবাডা। নান্দ্রে বার্গার নিয়েছেন ২ উইকেট। ১ উইকেট নিয়েছেন মার্কো জানসেন।
আরও পড়ুন: ক্যারিয়ারের যে পর্যায়ে রয়েছে কোহলি,ওর খুব বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই- বিরাটের লন্ডন যাওয়া নিয়ে দাবি রাঠোরের
ভারত কি এই সিরিজ জিতবে? ৩১ বছর পার হয়ে গিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে কোনও টেস্ট সিরিজ জেতেনি ভারত। আর এবারও প্রথম টেস্টেই ভারতের বেহাল দশা। সম্প্রচারকারী চ্যানেলে দ্রাবিড় টেস্ট শুরুর আগেই বলেছিলেন, ‘বেশ কয়েক বার আমরা জয়ের সামনে চলে এসেও শেষরক্ষা করতে পারিনি। কিছু ভাল ইনিংসও রয়েছে। জয় থেকে ৩০-৪০ রান দূরে থেকে গিয়েছি আমরা।’ দ্রাবিড় জানান, তার পরেও দুই বছর আগে ভারতীয় দল যে ক্রিকেট খেলেছিল, তা আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য ছিল যথেষ্ট। যেখানে প্রথম টেস্টে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত সিরিজ হারতে হয় ভারতকে। তাঁর দাবি, ‘শেষ টেস্ট সিরিজে ভারতীয় দল যে বোলিং করেছিল, সেটা সত্যিই অসাধারণ। সেই পারফরম্যান্সই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের হাতে যে বোলিং শক্তি রয়েছে, তাতে এখন ২০ উইকেট তোলার ক্ষমতা রয়েছে।’