বাংলায় হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। এই অভিযোগ বিজেপি তুলেছে। আর এমন অভিযোগ তুলে নয়াদিল্লির রাজপথে বিক্ষোভ দেখান বঙ্গ–বিজেপির সাংসদরা। এখানে মুসলিম তোষণ করা হয় বলে বিজেপির অভিযোগ। তারই পাল্টা ব্যারাকপুরের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ পার্থ ভৌমিক চড়া সুরে জানিয়ে দেন, ‘যোগীর হিন্দু ধর্ম চলবে না এই বাংলায়’। বিজেপি ‘সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি’ করে বলে বারবার অভিযোগ করে আসে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার রামনবমীকে কেন্দ্র করে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছেন, ‘ইদ শান্তিতে মিটেছে। আমরা চাই, এবার অন্নপূর্ণা পুজো, রামনবমী–সহ অন্যান্য উৎসবগুলিও শান্তিতে মিটুক।’ এই আবহে বিরোধীদের সপাটে জবাব দিলেন সাংসদ পার্থ ভৌমিক।
বিদেশের মাটিতে হিন্দু কিনা প্রশ্ন করা হয়েছিল। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। আবার তাঁকে সেখানে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি এবং সিপিএম। আর এই সব মিলিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আজ সাংসদ পার্থ ভৌমিক উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রতি সরাসরি আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সকল ধর্মকে সম্মান করেন বলেই দুর্গাপুজোয় রাজ্যের ৪২ হাজার পুজো কমিটিকে ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছেন। ঘোষণা করেছেন চলতি বছরের দুর্গাপুজোতে ১ লক্ষ টাকা অনুদান দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কিন্তু রামের পুজোর জন্য সরকারি অনুদান দেন না! বাংলায় হিন্দু ধর্ম পালন করার জন্য সরকারি তহবিল থেকে অর্থ সাহায্য করা হয়। তাহলে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের চেয়ে বড় হিন্দু কি আছে?’
আরও পড়ুন: শিক্ষা মিত্রদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে কাজে ফেরানোর নির্দেশ, রাজ্যকে দিল কলকাতা হাইকোর্ট
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, তিনি রামকৃষ্ণ মানেন, বিবেকানন্দের হিন্দুত্ব মানেন। কিন্তু বিজেপির নোংরা হিন্দুত্ব মানেন না। এবার বাঙালি মনীষীদের আদর্শ মনে করিয়ে দিয়েছেন সাংসদ পার্থ ভৌমিকের বক্তব্য, ‘মহাপ্রভু চৈতন্য, রামকৃষ্ণদেব এবং বিবেকানন্দের আদর্শ হল নিজের ধর্ম পালনের সঙ্গে অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা করা। এই মতাদর্শই বাংলায় চলে। যোগীর হিন্দু ধর্ম বাংলার বুকে চলবে না। যেখানে অন্য ধর্মের মানুষকে খুন করা হয়, মানুষ অত্যাচারিত হন এবং অন্য ধর্মকে ঘৃণা করা হয়! মমতা বন্দোপাধ্যায়ের থেকে বড় হিন্দু বাংলায় আর কেউ নেই। আমি হিন্দুর ছেলে, আমরা ধর্ম পালন করি বলেই সকালে ঘুম থেকে উঠে বড়মার মন্দিরে পুজো দিতে যাই। আর অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা করি।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলে থাকেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। সবাই নিজের ধর্ম পালন করুন, কিন্তু ধর্মের নামে হিংসা বা গুজব ছড়াতে চাইলে এই সরকার তা বরদাস্ত করবে না বলে জানান সাংসদ। রামনবমীতে বারবার অশান্তি হয়েছে। এবার পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করেছে। তাই অতীতের হিংসাকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘শান্তি বজায় রাখুন। দাঙ্গা করে কেউ কোনও দিন কিছু করতে পারেনি, পারবেও না। গৈরিকীকরণ এবং রক্তিমকরণকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেবেন না।’ তাই এবার সম্প্রীতিতে জোর দিলেন সাংসদ পার্থ ভৌমিক।