দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে ফের বিপর্যস্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা, ঘাটাল ও চন্দ্রকোণা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে একের পর এক এলাকা, নষ্ট হয়েছে জমির ফসল, ভেঙে গিয়েছে রাস্তা, কাঁচাবাড়ি। জেলাজুড়ে ক্ষতির পরিমাণ ইতিমধ্যেই ৩০০ কোটি টাকার গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তারা। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলাশাসকের সঙ্গে তাঁর সরাসরি কথা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় খুশি রাজ্য প্রশাসন।
আরও পড়ুন: বিঘার পর বিঘা জমি জলের তলায়, ক্ষতিপূরণ মিলবে তো! দুশ্চিন্তায় ঘাটালের কৃষকরা
জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি জানান, প্রবল বৃষ্টিতে একাধিক ব্লকে জল ঢুকে পড়ে। বহু জায়গায় চাষের জমি জলে ডুবে গিয়েছে। রাস্তা, সেতু ও বহু কাঁচাবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত সব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতির কথায়, সাধারণ মানুষ যে কী বিপদে পড়েছেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে। তবে প্রশাসনের আধিকারিকরা যেভাবে দিনরাত এক করে কাজ করছেন, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়।
উল্লেখ্য, ১৮ জুন রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে প্রথম জল ঢোকে গড়বেতা-১ ও ২ ব্লকের কিছু অংশে। ১৯ তারিখ সকালে অনেক গ্রামই পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পরদিন জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এলাকায় পৌঁছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গড়বেতা-১ ব্লকের ১১টি ও গড়বেতা-২ ব্লকের ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত। গড়বেতার কিছু এলাকায় জল নামলেও চন্দ্রকোণা ও ঘাটালের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনও জলে থইথই করছে। একাধিক এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। বহু পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গড়বেতা-২ ব্লকে ইতিমধ্যেই ২০০০-এর বেশি ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। পানীয় জলের বিশেষ ব্যবস্থা হয়েছে, আর প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গড়ে ৫ থেকে ৭ মেট্রিক টন চাল পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরও পাশে দাঁড়িয়েছে। একাধিক গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্প বসিয়ে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ শিবিরে দেওয়া হচ্ছে রান্না করা খাবারও। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ জানিয়েছেন, বহু রাস্তা ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবকিছু দ্রুত সারানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, তাঁর বাড়িতে কোমরসমান জল ঢুকে গিয়েছিল। প্রশাসনের লোকজন না এলে খুব বিপদে পড়তেন। এখনও জেলায় ত্রাণের কাজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন।