ইদানীংকালে যে রাজনীতিক প্রথম বাংলা ভাগ বা উত্তরবঙ্গকে আলাদা করে পৃথক রাজ্য কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের জিগির তুলেছিলেন, সেই জন বারলা ইতিমধ্যেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে নাম লিখিয়েছেন। বিজেপিতে থাকাকালীন মূলত অনুন্নয়ন, নিরাপত্তার অভাব ও উত্তরবঙ্গের প্রতি কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গকেন্দ্রিক রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে রাজ্যভাগের কথা বলতে শুরু করেছিলেন জন। আর, এবার সেই একই দাবি একটু ঘুরপথে করলেন বাম থেকে বিজেপি হওয়া, শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ।
তিনদিনের উত্তরবঙ্গ সফরে বেরিয়ে গত সোমবার শিলিগুড়ি পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকার কত কাজ করেছে, এই সফরে বারবার তার খতিয়ান তুলে ধরেছেন তিনি। সেই প্রেক্ষাপটেই গতকাল (মঙ্গলবার - ২০ মে, ২০২৫) শঙ্কর বলেন, 'উত্তরবঙ্গের অনেক মানুষ উত্তরবঙ্গের অবহেলা নিয়ে বলতে গিয়ে আলাদা রাজ্য চান। এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই।'
অর্থাৎ, তিনি নিজে বা তাঁদের দল উত্তরবঙ্গ কিংবা বাংলাভাগ করতে চাইছেন, এমনটা বলেননি শঙ্কর। বদলে তাঁর দাবি, 'উত্তরবঙ্গের অনেক মানুষ' এমনটা চাইছেন। তিনি বলেন, 'বিজেপি রাজ্য ভাগের পক্ষে নয়। কিন্তু উত্তরের অনেক মানুষই উত্তরবঙ্গ আলাদা হতে পারলেই ভালো বলে মনে করেন।'
এর আগে বিজেপিতে থাকাকালীন জন বারলা যখন রাজ্যভাগের কথা বলেছিলেন, সেই সময় একই সুরে বাজতে দেখা গিয়েছিল বিজেপির একাধিক নেতানেত্রীকে। সেই দলে ছিলেন - জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়, বিধায়ক আনন্দময় বর্মন, শিখা চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। যদিও পরে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, দল রাজ্যভাগের পক্ষে নয়। তারপরই এ নিয়ে শোরগোল বন্ধ করেন তাঁরা।
এদিকে, গতবারের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের একাধিক জায়গায় বিজেপির তুলনায় পিছিয়ে পড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার কেন্দ্রটি বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট উপনির্বাচনেও জিতেছে।
তথ্য বলছে, ধীরে ধীরে উত্তরে চা বলয়ে নিজেদের শিকড় মজবুত করছে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে, যে জন বারলার চা বলয়ে ভালো জনভিত্তি রয়েছে, তিনিও তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। তার উপর, ভোট বছর শুরু হওয়ার আগেই উত্তরবঙ্গকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে সফরে বেরিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো স্বয়ং। এই প্রেক্ষাপটে আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ ফের একবার ঘুরিয়ে রাজ্যভাগের প্রসঙ্গ তুলেছেন বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।